লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনী : অন্বেষা প্রকাশন
বিষয় : সমকালীন উপন্যাস
Number of Pages : 70
Country : Bangladesh
Language : Bengali
ফ্ল্যাপে লিখা কথা :
বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি গ্রহণ করা যায়। বিচিটা না-কি আড়াআড়ি থাকে। পনেরো হাত বিচি গ্রহণ করার কোনোই কারণ নেই। হিমুর বাবার কথামালা চল্লিশ পৃষ্ঠার একটি বই। এখানে দুই পৃষ্ঠার ভূমিকার অর্থ বারো হাত কাঁকুড়ের পনেরো হাত বিচি।
এ ধরনের বইয়ের ধারণা আমার মাথায় আসে নি। কবি বাপ্পির মাথায় এসেছে। সে প্রায় জবরদস্তি করেই হিমুর বাবাকে নিয়ে আমাকে লিখিয়েছে। হিমুর বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে কাজটা করিয়েছে আমার তা মনে হয় না। তার মধ্যে ‘বাণিজ্য’ বিষয়টা কাজ করেছে বলে আমার ধারণা। কবি সাহেব কিন্তু আবার একজন প্রকাশকও। আমি নিশ্চিত বাপ্পি কল্পনায় দেখছে- বইমেলা শুরু হয়েছে। পাঠকরা লাইন বেঁধে কিনেছে “হিমুর বাবার কথামেলা”।
স্বপ্ন দেকতে সবাই ভালবাসে। কবিরা একটু বেশি ভালবাসেন। এটাই স্বাবাবিক। মানব সম্প্রদায়ে স্বপ্ন দেখে না হিমুরা। তারা অন্যদের স্বপ্ন দেখায়।
‘হিমুর বাবার কথামালা’ বইটি শুধুমাত্র হিমুরা পড়লেই ভাল হয়। অন্যরা (বিশেষ করে কিশোর কিশোরীরা) যেন না পড়ে। তাদের মাথায় ‘ভ্রান্তি’ ঢুকে যেতে পারে। ভ্রান্তি একবার ঢুকে গেলে তাকে বের করা বেশ কঠিন। ভ্রান্তি একবার ঢুকে গেলে তাকে বের করা বেশ কঠিন। আমি ভ্রান্তির চাষ করতে চাই না।
এখন কথা হচ্ছে হিমু কে? আমি নিজে কি পরিষ্কার জানি? মনে তো হয় না। প্রায়ই যে সব চিঠি পাই তার একটা বড় অংশ এই জাতীয় লেকা থাকে-
“স্যার, হিমু হইবার নিয়মাবলি দয়া করিয়া জানাইবেন। আমি সিল্কের পাঞ্জাবী খরিদ করিয়াছি। আমার এক বন্ধু বলিয়াছে হিমুদের পাঞ্জারী সুতি হইতে হইবে। এই বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত জানাইয়া বাধিত করিবেন।”
“আংকেল, আমার নাম নাসিমা। আমি নবম শ্রেণীর ছাত্রী। আমার খুব ইচ্ছা আমি হিমু হব। মেয়েদের হিমু পোশাক কি? হলুদ পাঞ্জাবীর সঙ্গে কি ওড়না পরব? না-কি হলুদ শাড়ি পরব? হলুদ শাড়ি পরলে মনে হবে গায়ে হলুদে যাচ্ছি।”
“হুমায়ূন সাহেব! আমার বড় ছেলে সম্প্রতি হিমু হয়েছে। সে হলুদ পাঞ্জাবী পরে খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটাহাটি শুরু করেছে। গতকাল পা কেটে বাসায় ফিরেছে। তাতে টিটেনাস ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। আমার বক্তব্য আপনি লেখার মাধ্যমে কোমলমতিদের বিভ্রান্ত করে আনন্দ পান। একজন পিতা হিসেবে আপনার প্রতি অনুরোধ এই কাজটি করবেন না।”
আমার অবস্থা হচ্ছে ভিক্ষা চাই না হলুদ চিতাবাঘ সামলাও।
জগতের সমস্ত হিমুরা ভাল থাকুক।
লেখক:
হুমায়ূন আহমেদ (13 নভেম্বর 1948 - 19 জুলাই 2012) একজন বাংলাদেশী লেখক, নাট্যকার, চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে তিনিই সবচেয়ে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় লেখক, নাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। ডন তাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কিংবদন্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে। হুমায়ূন 1972 সালে তাঁর উপন্যাস নন্দিতো নরোকে (ইন ব্লিসফুল হেল) প্রকাশের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জনের যাত্রা শুরু করেছিলেন, যা তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত রচনাগুলির মধ্যে একটি। তিনি 250 টিরও বেশি ফিকশন এবং নন-ফিকশন বই লিখেছেন, যার সবকটিই বাংলাদেশে বেস্টসেলার ছিল, তাদের বেশিরভাগই বিস্তৃত ব্যবধানে নিজ নিজ বছরের এক নম্বর বেস্টসেলার ছিল। হুমায়ুনের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ, টাইমস অফ ইন্ডিয়া লিখেছে, "হুমায়ূন ছিলেন বাংলাদেশী সাহিত্য সংস্কৃতির একজন রক্ষক যার অবদান এককভাবে কোন যুদ্ধ বা বিপ্লব ছাড়াই বাংলা সাহিত্যের রাজধানী কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করেছিল।" আহমেদের লেখার ধরনটি "ম্যাজিক রিয়ালিজম" হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে এক শতাব্দী ধরে বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর মতে, আহমেদ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। 1990 এবং 2000 এর দশকের প্রতি বছর একুশে বইমেলায় আহমেদের বই শীর্ষ বিক্রেতা ছিল।